১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, ঘাতক দালালরা হত্যা করেছে ৩৩ লক্ষ নিরস্ত্র সাধারন মানুষ, ১ কোটি মানুষ গৃহহারা, ৪.৫ লক্ষ মা-বোনের উপর পাশবিক নির্যাতন। এই অপরাধের বিচার হোক।
Monday, August 2, 2010
মাওলানা রিয়াছাত আলি বিশ্বাস - সাতক্ষীরা আশাশুনির কুখ্যাত রাজাকার।
মুক্তিযুদ্ধকালে রিয়াছাত আলি বিশ্বাস ছিলেন সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলার শান্তি কমিটির সেক্রেটারি। রাজাকার রিয়াছাত আলি নির্বিচারে হত্যা করতে থাকেন মুক্তিযোদ্ধাদের। এছাড়া লুটপাট, অগ্নিসংযোগেরও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। কালীগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা ইউনুস, প্রতাপনগরের খগেন্দ্রানাথ সরকার, সোহরাব ও আলী হত্যামিশনের হোতা ছিলেন রিয়াছাত।
এ ছাড়া '৭১-এর জুন মাসে সুন্দরবন সংলগ্ন গাবুয়ার খোলপেটুয়া নদীতে মেজর জলিলের লঞ্চডুবি হলে বরিশাল অঞ্চলের নয়জন মুক্তিযোদ্ধা সাঁতরে উঠে আশ্রয় নেন প্রতাপনগরে। খবর পেয়ে রিয়াছাত বাহিনী এদের ধরে নিয়ে যায় খুলনার পাকসেনা ক্যাম্পে। সেই থেকে এই নয় মুক্তিযোদ্ধা চিরতরে হারিয়ে যান।
মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনী ও তার দোসরদের নির্যাতন চরমে উঠলে বরিশাল, পটুয়াখালী, বাগেরহাট ও খুলনার সাধারন মানুষ শরনার্থী হিসাবে ভারতমুখী হয়। বেশীরভাগই নৌকাযোগে সুন্দরবন সংলগ্ন সাতক্ষীরার কাছ দিয়ে যেত। আর রিয়াছাত ও তার বাহিনী এসব শরনার্থী নৌকায় চালাত লুটপাট।
'৭১ এর আগষ্টে এই রাজাকার খুলনার কয়রার খুকরোঘাটি লঞ্চঘাটে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ধরা পড়েন। এরপর তাকে কয়রার মুক্তিযোদ্ধা শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়। ক্যাম্পের দায়ীত্বপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা মতিয়ার রহমানের প্রতিবেশী হওয়ায় তার মহানুভবতায় প্রানভিক্ষা দেওয়া হয় রিয়াছাতকে এবং তাকে নিরাপদে প্রতাপনগরের নিজ বাড়িতে পৌছে দেন মুক্তিযোদ্ধারা। কৃতঘ্ন রিয়াছাত ২০০১ সালে প্রানভিক্ষা দেওয়া মহানুভব ব্যাক্তিটির বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে রক্তের ঋন শোধ করেন।
রাজাকার রিয়াছাত জেনারেল জিয়ার আমলে ১৯৭৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হয়ে নিজের পুনর্বাসন নিশ্চিত করেন। এরপর ১৯৯১তে ৫ম সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে সংসদে পা রাখেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোট থেকে জামায়াতের টিকিটে সাংসদ হন।
সুত্র ও সৌজন্যে - সাপ্তাহিক ২০০০, ২৬শে ডিসেম্বর ২০০৮