Monday, August 2, 2010

মাওলানা আব্দুল খালেক মন্ডল - সাতক্ষীরায় গনহত্যার নেতৃত্বদানকারী কুখ্যাত রাজাকার।


মহান মুক্তিযুদ্ধকালে সাতক্ষীরা জেলা শান্তি কমিটির সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য মাওলানা আব্দুল খালেক মন্ডল। সদর উপজেলার খলিলনগর গ্রামের লুতফর রহমান মন্ডলের(লালচাঁদ মন্ডল) পুত্র খালেক স্বাধীনতা যুদ্ধে সরাসরি বিরোধিতা করা ছাড়াও মেতে উঠেছিলেন বাঙালি নিধনে। হত্যা, ধর্ষন, লুন্ঠন, হিন্দুদের নির্যাতনসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তিনি করেননি। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন। তার নেতৃত্বে কাথন্ডা গ্রামের আবুল হোসেন গাজীকে রাজাকাররা বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে।

নিজ গ্রামের মঞ্ছুর আলি সরদার, কাথন্ডার হিমেপান্তি, বলদঘাটা গ্রামের সামসুর রহমান, অহেদ'কে তার নেতৃত্বে পাকবাহিনীর বৈকাবী ক্যাম্পে নিয়ে নির্মম নির্যাতন শেষে হত্যা করা হয়। বাশিয়াপাড়ার তাহের আলীর ছেলে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ায় খালেক মন্ডল তাকে দাঁতভাঙা বিল থেকে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় খালেক মন্ডল পাকবাহিনীকে নারী সরবরাহের ভুমিকা পালন করেন। খালেক বাহিনী কাথন্ডা গ্রামের শহর আলি দফাদার, মোহর আলি দফাদার, বদরুজ্জামান মল্লিক, আব্দুর রাজ্জাক সরদার ও দেলোয়ার হোসেন সরকার সহ ৭ মুক্তিযোদ্ধাকে বৈকাবী ক্যাম্পে ধরে এনে উল্টো করে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হলেও সে যাত্রায় তারা প্রানে বেঁচে যান। '৭১-এর এপ্রিল মাসে সাতক্ষীরা সরকারী বালক বিদ্যালয়ের পাশে যে ভয়াবহ গনহত্যা সংঘটিত হয় তারও নেতৃত্বে ছিলেন খালেক মন্ডল। ওই হত্যামিশনে সেখানে আশ্রয় নেওয়া শত শত শিশু নারী পুরুষ যারা ভারতে শরনার্থী হিসাবে আশ্রয় নিতে যাচ্ছিল তাদের নৃশংসভাবে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করে খালেক বাহিনী। এলাকায় বহুস্থানে বাঙ্কার করে সেখানে নিরপরাধ মানুষকে হত্যাশেষে মাটিচাপা দেয় এই খালেক বাহিনী। খালেক মন্ডল বাঙ্কার খুড়তে নির্দেশ দিলে, সে নির্দেশ পালনে অস্বীকার করায় মুক্তিযুদ্ধকালে নিজগ্রামের ঈমান আলীকে গুলি করে হত্যা করে রাজাকার খালেক বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধে ৭ ডিসেম্বর সাতক্ষীরা মুক্ত হওয়ার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় কদমতলা ব্রিজের কাছে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বন্দী হন।

অগনিত মানুষের প্রানসংহারী খালেক বন্দী হলেও প্রানভিক্ষা পান এবং পরবর্তীকালে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে জামায়াত ইসলামী থেকে সাংসদ হিসাবে জয়ী হন। জেএমবির সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।

সুত্র ও সৌজন্যে - সাপ্তাহিক ২০০০, ২৬শে ডিসেম্বর ২০০৮।