জামায়াতের সহকারী সম্পাদক এটিএম আজহারুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধকালে ছিলেন রংপুর জেলা ছাত্রসংঘের সভাপতি ও আলবদর বাহিনীর রংপুর শাখা কমান্ডার। রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার লোহানীপাড়ার বাসিন্দা আজহারুল মুক্তিযুদ্ধের সময় গোটা রংপুরকে আতঙ্কের জনপদে পরিনত করেন। জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ১৭ আগষ্ট পাকিস্তান বাহিনী আলবদর বাহিনীকে মিলিশিয়া বাহিনীর স্বীকৃতি দিলে ওইদিনই উৎফুল্ল আলবদর নেতা-কর্মীরা রংপুরে একটি সভার আয়োজন করে যাতে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন আজহারুল ইসলাম। ওই সভায় আজহারুল ও তার বাহিনী বাঙালির রক্তপানের শপথ নেয়।
আজহারুলের নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী '৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রংপুর কারমাইকেল কলেজের শিক্ষক কালাচাঁদ রায়, সুনীল বরণ চক্রবর্তী, শাহ সোলায়মান আলী, চিত্তরঞ্জন রায়, রামকৃষ্ণ অধিকারী, আব্দুর রহমান ও কালাচাঁদ রায়ের স্ত্রীকে ধরে নিয়ে কলেজ পার্শবর্তী দমদমা এলাকায় বেয়নেট চার্জ করে নির্যাতনের পর ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে আজহারুল এখন মানবরূপী দানব হিসাবে চিনহিত। স্বাধীনতাবিরোধী এই নরপিশাচ সম্প্রদায় নির্বিশেষে হিন্দু মুসলিম তরুণীদের ধরে এনে পাকবাহিনীর হাতে তুলে দিতেন। তার নেতৃত্বে ছিল ৭০ জনের একটি সশস্ত্র আলবদর স্কোয়াড যার ঘাটি ছিল রংপুর টাউন হল এলাকায়। মুক্তিবাহিনী রংপুর ঘিরে ধরলে আজহারুল '৭১-এর ডিসেম্বরের শুরুর দিকে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকা এসেও এই নরপিশাচ থেমে থাকেনি, যোগ দেন নিজামী ও মুজাহিদের সঙ্গে। বাঙালিকে মেধাশুন্য করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এই বদরবাহিনী দেশের শ্রেষ্ঠ ধরে মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং কলেজে স্থাপিত 'নির্যাতন সেলে' অকথ্য নির্যাতন করে। এরপর রায়েরবাজার বধ্যভুমিতে হত্যা করে এই আজহারুল, নিজামী ও মুজাহিদের নেতৃত্বাধীন বদরবাহিনী। ১৪ ডিসেম্বর দেশ যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে তখন এই বদরবাহিনী দেশবিখ্যাত বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে। এ ছাড়াও এই বদরবাহিনীর নেতা হত্যা করে মুক্তিযোদ্ধা কাসিমুউদ্দিনকে।
হিংস্র এই রাজাকার জয়বাংলা স্লোগান দেওয়ার অপরাধে মারধর করে রংপুর জেলা জাসদ সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত রাঙাকে এবং তার ভাই রফিকুলকে দুদিন আটকে রেখে চালায় অকথ্য নির্যাতন। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের প্রাক্কালে ১৬ ডিসেম্বর আজহারুল কয়েকজন সঙ্গ নিয়ে তাদের প্রিয়ভূমি পাকিস্তান পালিয়ে যান। সেখান থেকে পরবর্তীকালে চলে যান সৌদি আরব। '৭৫ পরবর্তীকালে ক্ষমতার পালাবদলে আজহারুল দেশে ফিরে আসেন এবং জামায়াতের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। বিগত '৯৬ ও ২০০১ এর নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ব্যবধানে পরাজিত হন এবং জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
সুত্র ও সৌজন্যে - সাপ্তাহিক ২০০০, ২৬শে ডিসেম্বর ২০০৮