Thursday, March 31, 2011

যুদ্ধাপরাধী ঘাতক দালাল রাজাকার - আব্দুল আলীম।

জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভার সদস্য আব্দুল আলীম স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় জয়পুরহাট মহকুমার (বর্তমানে জেলা) শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় আব্দুল আলীমের স্বাধীনতাবিরোধী তৎপরতা ও যুদ্ধাপরাধের বর্ণনা পাওয়া গেছে তৎকালীন সংবাদপত্র, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গ্রন্থ ও তার দ্বারা নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাৰ্য থেকে। গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত খলনায়ক আব্দুল আলীমের বিচারের দাবিতে এলাকাবাসী সোচ্চার হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।


একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় আব্দুল আলীম ছিলেন কথিত শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান। হানাদার পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর দোসর হয়ে তিনি তৈরি করেছিলেন এক রাজাকার বাহিনী। এই আলীম পাকি সেনা ও রাজাকারদের দিয়ে হত্যা করিয়েছেন এ দেশের মুক্তিকামী মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের। মুক্তিযুদ্ধের সময় জয়পুরহাটের সীমান্ত দিয়ে আসা-যাওয়া করতেন মুক্তিযোদ্ধারা। শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার পশ্চিম-উত্তরে যে সীমান্তরেখা রয়েছে এই সীমান্ত পথ ধরেই মুক্তিযোদ্ধারা আসত। ট্রেনিং নেবার জন্য এই পথ ধরেই যেত। যেত বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শরণার্থীরা। রাজাকারেরা এই পথে ও আশপাশ থেকে হত্যা করত মুক্তিযোদ্ধাদের। হত্যা করত শরণার্থী শিবিরে যাওয়া উদ্বাস্তুদের। এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা জানিয়েছেন, দালাল আব্দুল আলীমের নির্দেশে অথবা পরামর্শে হানাদার পাকি সেনা ও রাজাকাররা কাদিরপুর ও পানপাড়া গ্রামে হত্যা করে ৩শ' ৬১ জন মানুষকে। ওই পথেরই পাগল দেওয়ান গ্রামে মাজারের পাশ থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকা জুড়ে দশ হাজারেরও বেশি মানুষের লাশ চাপা দেয়া হয়েছে। এই বধ্যভূমিটি আবিষ্কার হয় প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় আগে। এই বধ্যভূমিতে অনেককে হত্যা করা হয়েছে আব্দুল আলীমের নির্দেশে। এ তথ্য জানিয়ে ক'জন মুক্তিযোদ্ধা জানান, রাজাকার আব্দুল আলীমের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। '৭১-এর ২৬ জুলাই হত্যা করা হয়েছে ডা. আবুল কাশেমকে। এই যুদ্ধাপরাধীর বিচারের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠছে এলাকার মানুষ। দেশ বিজয় অর্জনের পর দালাল আইনে জয়পুরহাট থানায় প্রথম মামলাটি হয়েছিল আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে।

স্বাধীনতার অব্যাবহিত পরে দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত 'হানাদার বাহিনীর বর্বরতা মধ্যযুগীয় ঘাতকদেরও হার মানিয়েছে' শিরোনাম যুক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, জয়পুরহাট শান্তি কমিটির নেতা জয়পুরহাট ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মুসলিম লীগের আব্দুল আলীমকে একদিন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল প্রেসিডেন্টের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার পর সংখ্যালঘুদের দেশে ফেরার নিশ্চয়ই আর কোন বাধা নেই। উত্তরে তিনি বলেছিলেন যে, ওদের ক্ষমা নেই। ওরা দেশে ফিরলেই ওদের সামরিক বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হবে। শুনে স্তম্ভিত হতে হয়েছে। একজন উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি যদি এ রকম ধারণা পোষণ করেন তবে সংখ্যালঘুদের সম্পর্কে অল্পশিক্ষিত ও অশিক্ষিত দালালদের কি রকম মনোভাব ছিল তা অতি সহজেই অনুমান করা যায়। বস্তুত ইয়াহিয়া খানের লোক দেখানো ৰমা ঘোষণার পরিপ্রেৰিতে যেসব মুষ্টিমেয় সংখ্যালঘু ফিরে এসেছিল তাদের আর পৃথিবীর আলো-বাতাস দেখতে হয়নি। (দৈনিক বাংলা, ১২ জানুয়ারি ১৯৭২)।

মুক্তিযুদ্ধের সময় আব্দুল আলীমের নারকীয় তৎপরতা সম্পর্কে প্রকাশিত অপর একটি তথ্য- 'আব্দুল আলীম সেই সময় নিজের হাতে বাঙালীদের লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে গুলি করে মেরেছিলেন। এ ছাড়া বেয়নেট চার্জ করে বহু বাঙালীকে মারার অভিযোগও তার বিরুদ্ধে রয়েছে।' তথ্য সূত্র : একাত্তরের ঘাতক ও দালালরা কে কোথায়, মুক্তিযুদ্ধ চেতনা বিকাশ কেন্দ্র, ঢাকা ১৯৮৭, পৃ. ৩৮-৩৯।

এই গ্রন্থে আব্দুল আলীমের একটি আলোকচিত্র মুদ্রিত হয়েছে, যার নিচে লেখা ছিল, '৭১-এ পাকবাহিনী জয়পুরহাটে বেশকিছু সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাকে গ্রেফতার করে। চোখ বাঁধা অবস্থায় সারা শহর ঘোরানোর পর তাদের হত্যা করা হয়। ছবিতে এই অভিযানে নেতৃত্বাদানকারী মেজর আফজালের পাশে তদানীন্তন জয়পুরহাট শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম (চিহ্নিত) হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে ছিল। সামনে উপবিষ্ট পেছনে হাত বাঁধা হতভাগ্য মুক্তিযোদ্ধারা। জয়পুরহাট মুক্ত হবার পর এখানে আব্দুল আলীমকে খাঁচায় পুরে জনসাধারণের দেখার জন্য রেখে দেয়া হয়েছিল।

জয়পুরহাটের শহীদ ডা. আবুল কাশেমের পুত্র ডা. কাজী নজরুল ইসলাম গণতদন্ত কমিশনকে জানিয়েছেন ১৯৭১ সালের ২৪ জুলাই দিবাগত রাতে আব্দুল আলীমের নির্দেশে জয়পুরহাট শহরের নিজ বাসা থেকে তার পিতা ডা. আবুল কাশেমকে পাকিস্তানী বাহিনী ও রাজাকাররা বাড়ি ঘেরাও করে বলপূর্বক ধরে নিয়ে যায়। সে রাতে তারা জয়পুরহাট স্টেশনে আবুল কাশেমের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে ২৫ জুলাই সকাল ৮ টায় তাঁকে শান্তি কমিটির অফিসে আব্দুল আলীমের কাছে নিয়ে যায়। স্থানীয় শওনলাল বাজনার গদিঘরটি আব্দুল আলীম ও তার সহযোগীরা দখল করে শান্তি কমিটির অফিস বানিয়েছিল। আবুল কাশেমকে তারপর আব্দুল আলীমের নির্দেশে জয়পুরহাট থানা ও পরে খঞ্জনপুরে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ক্যাম্পে একদিন এক রাত আটক রাখার পর ১৯৭১ সালের ২৬ জুলাই সন্ধ্যায় আব্দুল আলীমের নির্দেশে আবুল কাশেমকে হত্যা করা হয়। এক মাস পর আখ ৰেতে শহীদ ডা. আবুল কাশেমের অর্ধগলিত মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল। আব্দুল আলীমের নির্দেশে শহীদ ডা. আবুল কাশেমকে হত্যা করার ঘটনাটি সম্পর্কে বম্বু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোল্লা শামসুল আলমসহ আরও অনেকে সাৰ্য দিয়েছেন।

আব্দুল আলীমের সংঘটিত নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী বম্বু ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলম গণতদন্ত কমিশনকে জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালে পাহাড়পুরে পাকিস্তানীদের সাথে সম্মুখযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধা ফজলু আহত হয়েছিলেন। পরে তাকেসহ আরও দু'জনকে পাকিস্তানীরা আটক করে জয়পুরহাট শহরে নিয়ে সিও কলোনি হলরম্নম আদালতে আব্দুল আলীমের কাছে নিয়ে গিয়েছিল। যে ট্রাকে করে দাঁড়িয়ে তখন আব্দুল আলীম উপস্থিত সমর্থকদের উদ্দেশে বলেছিলেন এই ফজলুর বাবা আমার একজন বন্ধু। আমি তার ছেলেকে এই পথ থেকে ফেরত আনার জন্য বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও ফজলুকে সে ফেরত আনেনি। আজকে তার শাস্তি তাকে গ্রহণ করতে হবে। তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। এখনও যারা আপনাদের বাড়ির আশপাশে জয় বাংলার কথা বলে তাদেরকে লাঠিকোপা করে মেরে ফেলেন। ফজলু ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাকে পরে ট্রাকে করে আব্দুল আলীমের বাড়িতে নিয়ে তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন করা হয়েছিল। এরপর সকলকে খঞ্জনপুর বধ্যভূমিতে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়।

ইউপি চেয়ারম্যান শামসুল আলম মুক্তিযোদ্ধাদের সময় আব্দুল আলীম কর্তৃক নিরীহ গাড়োয়াল সম্প্রদায়কে হত্যা করার ঘটনা তার জবানবন্দীতে জানিয়েছেন। ১৯৭১ সালে এপ্রিল মাসের শেষের দিকে পাকিস্তানী সৈন্যরা সড়ক থেকে ২৬ জন নিরীহ গাড়োয়ালকে ধরে আব্দুল আলীমের বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল। বাড়ির চাতালে ৩/৪ দিন আটকে রাখার পর আব্দুল আলীমের নির্দেশে গাড়োয়ালদের খঞ্জনপুর বধ্যভূমিতে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। তিনি আরও জানিয়েছেন স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় আব্দুল আলীমের বাড়িটি ছিল জয়পুরহাটের রাজাকার রিক্রুটমেন্ট ক্যাম্প। আব্দুল আলীমের দায়িত্ব ছিল রাজাকার রিক্রুট করা।

মোলস্না শামসুল হক গণতদন্ত কমিশনকে জানিয়েছেন, মরহুম জামায়াত নেতা আব্বাস আলী খান ও আব্দুল আলীমের নির্দেশে ১৯৭১ সালে এপ্রিল মাসে পাকিস্তানী সৈন্যরা কড়ইকাদিপুর গ্রামের হিন্দু এলাকা ঘেরাও করে ১৬৫ জন নিরীহ, নিদের্াষ মানুষকে হত্যা করে ও তাদের বাড়িঘর লুটপাট করে। আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে হত্যা, নির্যাতনের সঙ্গে সঙ্গে গণধর্ষণের অভিযোগ রয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান শামসুল হক জানান, স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী সৈন্য ও রাজাকাররা নিরীহ মা-বোনদের ওপর যে পাশবিক নির্যাতন করেছে সে সম্পর্কে আব্দুল আলীমের বক্তব্য ছিল যুদ্ধের সময় সেনা বাহিনী এমন ঘটনা ঘটায়ই। এটা কোন দোষের বিষয় নয়, দেশের স্বার্থে এটা মেনে নিতে হবে।

জয়পুরহাট কলেজের সহযোগী অধ্যাপক শামসুল আলম জানিয়েছেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় আব্দুল আলীম ও তার সহযোগীরা জয়পুরহাটের মঙ্গলবাড়ী গ্রাম থেকে ২৬ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে আটক করে ২টি ট্রাকে করে জয়পুরহাট শহর প্রদৰিণ করিয়েছিল এবং তাদের প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করেছিল জয়পুরহাট কলেজ মাঠে। সেখানে আব্দুল আলীম উপস্থিত ছাত্রদের উদ্দেশে বলেছিলেন, কলেজ ছাত্ররা, তোমরা বুঝতেই পারছ মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থা। এরা কিছুক্ষণ পরেই মারা যাবে। তোমরা যদি এ রকম মুক্তিযোদ্ধা হও তোমাদের পরিণতিও এমন হবে। এর পর আব্দুল আলীমের নির্দেশে নির্দোষ মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করা হয়েছিল।

জয়পুরহাট নিবাসী মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী জানিয়েছেন, ৫ ডিসেম্বর তিনি ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা জয়পুরহাটে ঢুকেছিলেন। সেদিনই শান্তি কমিটির কার্যালয় দখল করে স্থানীয় বুদ্ধিজীবী হত্যার তালিকাসহ অন্য যে সমস্ত কাগজপত্র পান তার মধ্যে ১৯৭১ সালে ৪ ডিসেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রী জামায়াত নেতা মরহুম আব্বাস আলী খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেই সভার কাগজপত্রে আব্দুল আলীমের স্বাক্ষর ছিল। এ ছাড়াও জয়পুরহাটে আব্দুল আলীম কর্তৃক নিরীহ মানুষের ওপর সংঘটিত নির্যাতন, অত্যাচার ও হত্যাকা-ের আরও বিস্তৃত বর্ণনা পাওয়া গেছে সাক্ষ্য প্রদানকারী স্থানীয় অধিবাসীদের কাছ থেকে।

স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতা করা ও মুক্তিযোদ্ধাসহ মুক্তিকামী মানুষদের হত্যার অভিযোগ রয়েছে যে যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে তিনি জনপ্রতিনিধি হিসেবে সংসদে গিয়েছেন। স্বাধীনতা ও বিজয় অর্জনের ২৯ বছর পর এলাকায় দাবি উঠেছে যুদ্ধাপরাধী এই রাজাকারের বিচারের।

যুদ্ধাপরাধী ঘাতক দালাল রাজাকার - ফরিদউদ্দিন চৌধুরী।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এমসি কলেজে স্নাতক শ্রেনীতে অধ্যায়নরত ফরিদউদ্দিন চৌধুরী ছিল সিলেট জেলা ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি। এক সময় সারাদেশে বদরবাহীনির কার্যক্রম শুরু হলে তিনি ৩১ পাঞ্জাব রেজিমেন্টে সভা করে সিলেট বদর বাহিনীর কার্যক্রমের সুচনা করেন। তার নেতৃত্বাধীন বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থান জেনে সেসব খবর পাকবাহিনীর কাছে সরবরাহ করতেন। সেই সুত্র অনুযায়ী, পাকবাহিনী চালাত তাদের বাঙালি হত্যামিশন। এক কথায় পাকবাহিনীর সিলেটের পথপ্রদর্শক ছলেন রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধী ফরিদ। তিনি সংখ্যালঘু নির্যাতন, তাদের সম্পত্তি দখল এবং লুটপাটে নেতৃত্ব দিতেন। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান। জেনারেল জিয়ার আমলে অন্যান্য স্বাধীনতাবিরোধীর মত ফরিদও সিলেটে পদার্পণ করেন, শুরু করেন মসজিদের ইমামতি। পরবর্তীকালে শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে নিজেই সেটার অধ্যক্ষ বনে যান। '৯৬ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলেও হেরে যান। তবে ২০০১ সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য মাওলানা ফরিদউদ্দিন চৌধুরী সংসদ সদস্য হওয়ার পরে তার অর্থবিত্ত হয়েছে। তার দুর্নীতি ও জকিগঞ্জ উপজেলাকে উন্নয়নবঞ্চিত করার প্রতিবাদে জোট সরকারের শেষের দিকে সিলেট শহরে বসবাসরত জকিগঞ্জবাসী মানববন্বন কর্মসুচী পালন করে। এই ক্ষোভের হাত থেকে বাঁচতে সংসদ সদস্য থাকাকালে তিনি জকিগঞ্জ যেতেন পুলিশ ও শিবির ক্যাডার পরিবেষ্টিত হয়ে। বর্তমানে তিনি আলবারাকা প্রাইভেট লিমিটেডের জালালাবাদ স্যাটেলাইট সিটির চেয়ারম্যান, অত্যাধুনিক আলহামারা শপিং সিটির ভাইসচেয়ারম্যান সহ বহু ব্যাবসায়ে জড়িত। সুত্র ও সৌজন্যে - সাপ্তাহিক ২০০০, ২৬শে ডিসেম্বর ২০০৮

যুদ্ধাপরাধী ঘাতক দালাল রাজাকার - এটিএম আজহারুল ইসলাম।

জামায়াতের সহকারী সম্পাদক এটিএম আজহারুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধকালে ছিলেন রংপুর জেলা ছাত্রসংঘের সভাপতি ও আলবদর বাহিনীর রংপুর শাখা কমান্ডার। রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার লোহানীপাড়ার বাসিন্দা আজহারুল মুক্তিযুদ্ধের সময় গোটা রংপুরকে আতঙ্কের জনপদে পরিনত করেন। জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ১৭ আগষ্ট পাকিস্তান বাহিনী আলবদর বাহিনীকে মিলিশিয়া বাহিনীর স্বীকৃতি দিলে ওইদিনই উৎফুল্ল আলবদর নেতা-কর্মীরা রংপুরে একটি সভার আয়োজন করে যাতে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন আজহারুল ইসলাম। ওই সভায় আজহারুল ও তার বাহিনী বাঙালির রক্তপানের শপথ নেয়।

আজহারুলের নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী '৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রংপুর কারমাইকেল কলেজের শিক্ষক কালাচাঁদ রায়, সুনীল বরণ চক্রবর্তী, শাহ সোলায়মান আলী, চিত্তরঞ্জন রায়, রামকৃষ্ণ অধিকারী, আব্দুর রহমান ও কালাচাঁদ রায়ের স্ত্রীকে ধরে নিয়ে কলেজ পার্শবর্তী দমদমা এলাকায় বেয়নেট চার্জ করে নির্যাতনের পর ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছে আজহারুল এখন মানবরূপী দানব হিসাবে চিনহিত। স্বাধীনতাবিরোধী এই নরপিশাচ সম্প্রদায় নির্বিশেষে হিন্দু মুসলিম তরুণীদের ধরে এনে পাকবাহিনীর হাতে তুলে দিতেন। তার নেতৃত্বে ছিল ৭০ জনের একটি সশস্ত্র আলবদর স্কোয়াড যার ঘাটি ছিল রংপুর টাউন হল এলাকায়। মুক্তিবাহিনী রংপুর ঘিরে ধরলে আজহারুল '৭১-এর ডিসেম্বরের শুরুর দিকে ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকা এসেও এই নরপিশাচ থেমে থাকেনি, যোগ দেন নিজামী ও মুজাহিদের সঙ্গে। বাঙালিকে মেধাশুন্য করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এই বদরবাহিনী দেশের শ্রেষ্ঠ ধরে মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং কলেজে স্থাপিত 'নির্যাতন সেলে' অকথ্য নির্যাতন করে। এরপর রায়েরবাজার বধ্যভুমিতে হত্যা করে এই আজহারুল, নিজামী ও মুজাহিদের নেতৃত্বাধীন বদরবাহিনী। ১৪ ডিসেম্বর দেশ যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে তখন এই বদরবাহিনী দেশবিখ্যাত বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে। এ ছাড়াও এই বদরবাহিনীর নেতা হত্যা করে মুক্তিযোদ্ধা কাসিমুউদ্দিনকে।

হিংস্র এই রাজাকার জয়বাংলা স্লোগান দেওয়ার অপরাধে মারধর করে রংপুর জেলা জাসদ সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত রাঙাকে এবং তার ভাই রফিকুলকে দুদিন আটকে রেখে চালায় অকথ্য নির্যাতন। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের প্রাক্কালে ১৬ ডিসেম্বর আজহারুল কয়েকজন সঙ্গ নিয়ে তাদের প্রিয়ভূমি পাকিস্তান পালিয়ে যান। সেখান থেকে পরবর্তীকালে চলে যান সৌদি আরব। '৭৫ পরবর্তীকালে ক্ষমতার পালাবদলে আজহারুল দেশে ফিরে আসেন এবং জামায়াতের রাজনীতিতে সক্রিয় হন। বিগত '৯৬ ও ২০০১ এর নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ব্যবধানে পরাজিত হন এবং জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।


সুত্র ও সৌজন্যে - সাপ্তাহিক ২০০০, ২৬শে ডিসেম্বর ২০০৮